adsterra.com

আলোচনা নোটঃ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার গলদ ও তার প্রতিকার


আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার গলদ ও তার প্রতিকার
শিক্ষাব্যবস্থার আলোচনা নোট
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার গলদ ও তার প্রতিকার

শিক্ষাঃ
কোন বস্তুকে বুঝতে হলে তার উপাদান বিশ্লেষণ
 করে দেখা একান্ত জরুরী। ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রতিশব্দ হলো Education।
Education মানে- To Bring up and instruct
  • to teach
  • to train
অর্থাৎ প্রতিপালন করা ও শিক্ষিত করে তোল, শিক্ষা দেওয়া, অভ্যাস করানো।
Education শব্দটি এসেছে ল্যাটিন EdexandDucer Ducশব্দগুলো থেকে।
Education শব্দটির বুৎপত্তি অনুযায়ী শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীর মধ্যকার ঘুমন্ত প্রতিভা বা সম্ভাবনার পথ নির্দেশক।
কুরআন-হাদীস এবং আরবি ভাষায় শিক্ষার জন্য যেসব পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে-
  • ১. তারবীয়াহ্
  • ২. তালীম
  • ৩. তাদীব
  • ৪. তাদরীব
  • ৫. তাদরীস
শিক্ষার উদ্দেশ্য
আত্ম উপলব্ধি।-জন ডিউই
মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিস্কার।-সক্রেটিস
ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখ লাভ করা।-এরিস্টটল
শিশুর সম্ভাবনা ও অনুরাগের পূর্ণবিকাশ ও তার নৈতিক চরিত্রের কাঙ্খিত প্রকাশ।-হার্বার্ট
সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে সুখ লাভ করা।-কমেনিয়াস
সুঅভ্যাগ গড়ে তোলা।-পার্সীসন
পূর্ণাঙ্গ মুসলিম গড়ে তোলা।-ইকবাল
১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতভাবেশিশু অধিকার সনদগৃহীত হয়।
  •  এতে ৫৪ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।
  •  অনুচ্ছেদ ২৮ শিশু অধিকার নিশ্চিত করার দলিল।
  •  অনুচ্ছেদ ২৯/১-এ শিক্ষার লক্ষ্য বর্ণনা করা হয়েছে।
  •  শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ১৫টি বিষয়ের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্জন প্রক্রিয়াঃ
  • আনুষ্ঠানিক শিক্ষা/Formal Education
  • উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা/ Non-formal Education
  • অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা/ Informal Education
 গলদ বা সংকটের উৎস
১. ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা
২. দ্বিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা
৩. দাতা সংস্থার শতর্ ারোপ
৪. ভারতের আগ্রাসী নীতি
৫. এনজিও শিক্ষা



গলদ বা সংকটের কারণঃ


১. শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক সংকট
২. নৈতিকতা বিবর্জিত ধর্মহীন শিক্ষা
৩. উপযুক্ত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির অভাব
৪. মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়
৫. শিক্ষাব্যবস্থা কর্মোপযোগী নয়
৬. বিভিন্ন ধারার প্রাথমিক শিক্ষা
৭. সুষ্পষ্ট লক্ষ্যের অনুপস্থিতি
৮. আত্ম-সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ
৯. প্রতিভা বিকাশের সুযোগ কম
১০. ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি
১১. কাঙ্খিত মানের শিক্ষক সংকট
১২. শিক্ষা পেশায় মেধা আকর্ষন করার ব্যবস্থা নেই
১৩. নিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম
১৪. শিক্ষকদের পদ শূণ্য থাকা
১৫. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা অপ্রতুল ও অকার্যকর
১৬. পরিচালনা পরিষদ দ্বন্দ্ব
১৭. দূর্নীতিতে নিমজ্জিত অদক্ষ শিক্ষা প্রশাসন
১৮. মাদ্রসা শিক্ষায় প্রশাসনিক অবকাঠামোর অপ্রতুলতা
১৯. মাদ্রাসার ছাত্ররা বৈষম্যের শিকার
২০. মাদ্রাসাসমূহের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ
২১. জবাবদিহিতার কার্যকর ব্যবস্থা নেই
২২. লেজুরভিত্তিক ও সন্ত্রাস নির্ভর ছাত্ররাজনীতি
২৩. পরীক্ষায় নকল প্রবণতা
২৪. প্রাইভেট ও নোট বইয়ের ব্যাপক প্রচলন
২৫. বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য
২৬. বিজ্ঞান শিক্ষা উপকরনের অভাব
২৭. লাইব্রেরী, বই ও যোগাযোগের অভাব
২৮. সহ-পাঠক্রম কার্যালীর অপ্রতুলতা
২৯. শিক্ষাঙ্গনে বিরুপ পরিবেশ
৩০. বিকৃত ইতিহাসের শিকার কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীরা


শিক্ষানীতি, শিক্ষাকাঠামো ও বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন
আকরাম খাঁ শিক্ষা কমিশন (১৯৪৯-৫১), আতাউর রহমান খান (১৯৫৪), শরিফ কমিশন (১৯৫৮), বিচারপতি হামুদুর রহমান
কমিশন(১৯৬৬)

কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন(১৯৭২-৭৪)ঃ এ কমিশন ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার নামে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের সুপারিশ করে। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে মানুষ এ ঘৃণ্য উদ্যোগের ফলাফল থেকে রক্ষা পায়।

১৯৭৬-প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাসনামলে
  • ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন কমিটি গঠন
  • ৫ম-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইতে বাধ্যতামূলক ধর্ম শিক্ষা
  • মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্তি করা হয় ১৯৭৮-তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী কাজী জাফরের নেতৃত্বে শিক্ষা কমিটি গঠন। মজিদ খান শিক্ষা কমিশন (১৯৮৩)
  • প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ তুলে ধরা হয়
  • ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত আরবী ও ইসলামিয়াত বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৯৯১-৯৫ ঃ
শিক্ষাবোর্ড পুস্তকে ইসলামী ভাবধারার লেখা কমিয়ে দেয়।(টেক্সট নির্ধারণে নিজস্বমতামতের স্বাধীনতা)
১৯৯৭ঃ
প্রফে.এম.শামসুল হকের নেতৃত্বে ৫৬ সদস্য বিশিষ্টজাতীয় শিক্ষানীতি কমিটিগঠন।(বাস্তবায়ন হয়নি)

শিক্ষার গলদ নিরসনের উপায়
  • ১. কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশনের ভিত্তিতে রচিতজাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০বাতিল করতে হবে।
  • ২. এদেশের মানুষের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট শিক্ষানীতি প্রনয়ন।
  • ৩. পাঠ্যপুস্তকে মূল্যবোধ রক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
  • ৪. শিক্ষার সকল পর্যায়ে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
  • ৫. মসজিদ ভিত্তিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
  • ৬. সকল স্তরে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করতে হবে।
  • ৭. জবাবদিহিতার কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ৮. বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
  • ৯. বেসরকারী স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায়সরকারী কর্ম কমিশনেরমাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ১০. শিক্ষকদের আকর্ষনীয় বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
  • ১১. নিয়মিত প ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
  • ১২. ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন।১৩. আদর্শভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালু।
  • ১৪. নকল রোধের কার্যকর ব্যবস্থা।
  • ১৫. কোচিং ও যত্রতত্র গাইড নোটের প্রচলন বন্ধ করা।
  • ১৬. ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা।
  • ১৭. মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
  • ১৮. প্রাথমিক শিক্ষার মত এবতেদায়ী মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা, বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ ও বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা।
  • ১৯. প্রতিটি বিভাগে একটি করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করতে হবে।
  • ২০. মাদ্রাসা শিক্ষায় কারিগরী ও বাণিজ্য শাখা খুলে তাদের জন্য জ্ঞান অর্জনের পথ সুগম করতে হবে।
  • ২১. মাদ্রাসার জন্য একটি আলাদা টেক্সটবুক বোর্ড গঠন করতে হবে।
  • ২২. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে। এতে ওআইসির প্রদত্ত সুপারিশমালা গ্রহণ করতে হবে। সরকারীমাদ্রাসা-ই-আলীয়াঢাকাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে হবে।
  • ২৩. প্রতি জেলায় একটি সরকারী কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • ২৪. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকল অনিয়ম দূর করতে হবে।
  • ২৫. শিক্ষা উপকরনের মূল্য হ্রাস, পরিবহনে ছাত্রদের জন্য বিশেষ ছাড়, পর্যাপ্ত আবাসিক ও ছাত্রদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার
    উন্নয়ন সহ আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে।
  • ২৬. বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য সর্বাধুনিক রেফারেন্স সমৃদ্ধ বই সংগ্রহ এবং বহির্বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে Counseling 
    ও Interaction বৃদ্ধি করতে হবে।
ইসলামী আদর্শ, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজানো দরকার। এটাই হওয়া উচিৎ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের মনের দাবিও  এটি । প্রয়োজনে এর জন্য গণভোটেরও আয়োজনও করা
যেতে পারে। বিগত কয়েক শত বৎসর যাবত এদেশের গণ-মানুষ একটি কাঙ্খিত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই
প্রচেষ্টার এক উল্লেখযোগ্য
 অংশ হচ্ছে ১৯৬৯ সালের ১৫ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেকের
শাহাদাত। তিনি ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শহীদ হন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা আন্দোলন ছাত্র- শিক্ষকসহ সর্বস্তরে ব্যাপক সমর্থন আদায় করেছিল। শধুমাত্র লক্ষ্যহীন শিক্ষাব ব্যবস্থার কবলে পড়ে জাতি আজ সর্বক্ষেত্রে সংকটকাল অতিক্রম করছে। জাতিকে বাঁচানো প্রয়োজন। তাকে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন।
আমি বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গলদ,এর কারণ ও উত্তরণের মৌলিক বিষয়গুলো আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। একটি সুস্থ,
সৃজনশীল জাতি গঠনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন করে তা পুনর্বিন্যস্ত করার দায়িত্ব সরকারের।

No comments

Thank You For your Comments.

Powered by Blogger.
(function(i,s,o,g,r,a,m){i['GoogleAnalyticsObject']=r;i[r]=i[r]||function(){ (i[r].q=i[r].q||[]).push(arguments)},i[r].l=1*new Date();a=s.createElement(o), m=s.getElementsByTagName(o)[0];a.async=1;a.src=g;m.parentNode.insertBefore(a,m) })(window,document,'script','https://www.google-analytics.com/analytics.js','ga'); ga('create', 'UA-127411154-1', 'auto'); ga('require', 'GTM-WSRD5Q2'); ga('send', 'pageview'); (function(i,s,o,g,r,a,m){i['GoogleAnalyticsObject']=r;i[r]=i[r]||function(){ (i[r].q=i[r].q||[]).push(arguments)},i[r].l=1*new Date();a=s.createElement(o), m=s.getElementsByTagName(o)[0];a.async=1;a.src=g;m.parentNode.insertBefore(a,m) })(window,document,'script','https://www.google-analytics.com/analytics.js','ga'); ga('create', 'UA-127411154-1', 'auto'); ga('require', 'GTM-WSRD5Q2'); ga('send', 'pageview');